বিশেষ প্রতিবেদন : আইএসএল বা ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলছে বাংলার মোহনবাগান। সেইজন্য অবশ্য এটিকে (আগে যা ছিল, অ্যাথলেটিকো কলকাতা) ক্লাবের সঙ্গে মিশে গিয়েছে তারা। ফলে এটিকে–র বিনিয়োগকারীই এখন মোহনবাগানের বিনিয়োগকারী। আইএসএলের শর্ত অনুযায়ী, দলে লগ্নিকারী সংস্থা না থাকলে সেই দল আইএসএল–এ খেলতে পারবে না। সেই শর্ত পূরণ করতে পেরেছে মোহনবাগান। কিন্তু অনেক সংস্থার সঙ্গে কথা চালালেও মূল বিনিয়োগকারী খুঁজে পাচ্ছিল না ইস্টবেঙ্গল। ইতিমধ্যে আইএসএলে কারা খেলবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের শেষ তারিখও পেরিয়ে যায়। ফলে ইস্টবেঙ্গল এ বছর আইএসএলে খেলছে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন ক্রীড়ামোদি মানুষ।
কিন্তু সব ধারণা পাল্টে গেল বুধবার। ইস্টবেঙ্গল পেয়ে গেল তাদের ইনভেস্টর। এবার থেকে ইস্টবেঙ্গলের মূল বিনিয়োগকারী কলকাতারই শ্রী সিমেন্ট। তারা ইস্টবেঙ্গলের ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ শেয়ার থাকছে ক্লাবের হাতে। শুধু তাই নয়, ক্লাবের তরফে বলা হয়েছে, শ্রী সিমেন্ট লগ্নি করলেও দলের লাল–হলুদ জার্সির রং বা দলের লোগো ‘মশাল’ বদলাচ্ছে না। দলের সহকারী সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত বললেন, ‘চুক্তি প্রায় হয়েই গিয়েছে। মাত্র ১–২ শতাংশ কথা বাকি রয়েছে। আশা করা যায়, সব ইতিবাচকই হবে। চুক্তিটি যাতে হয়, তা নিয়ে আমাদের তরফে মরিয়া চেষ্টা ছিল। এখন যে ভাবে ফিফা বা এএফসি চলছে, তাতে লগ্নিকারী ছাড়া পৃথিবীতে কোথাও ফুটবল চলছে না। সুতরাং ক্লাবের পরিকাঠামোর জন্য বড় হাত ধরতেই হত।’
মূল লগ্নিকারী সংস্থা পেতে ইস্টবেঙ্গলকে সাহায্য করার জন্য দলের তরফে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এটিকে–র অন্যতম কর্তা তথা ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে দলের সচিব কল্যাণ মজুমদার জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সক্রিয় উদ্যোগ ছাড়াও তাঁদের সবসময় মানসিক সমর্থন করে গিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, এটিকে–মোহনবাগানের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের অন্যতম সদস্য হলেন সৌরভ। আর এটিকে–মোহনবাগান হল ইস্টবেঙ্গলের চিরকালের শত্রুপক্ষ। কিন্তু বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের স্বার্থে এই সহায়তার জন্য সৌরভের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গল লগ্নিকারী পেয়ে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত কলকাতা ময়দান। মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য এক সময় ইস্টবেঙ্গলেও কোচিং করিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কলকাতা যেমন ভারতীয় ফুটবলের মক্কা, তেমনই মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ছাড়া ভারতের ফুটবল হতে পারে না। আগেও হয়নি, এখনও হবে না। ভবিষ্যতেও তাই।’
ইস্টবেঙ্গলের এক সময়ে আসিয়ান জয়ী কোচ সুভাষ ভৌমিক বলেছেন, ‘এই ব্যাপারটা বাংলার ফুটবলের স্বার্থে দেখলে হবে না, দেখতে হবে ভারতীয় ফুলবলের চোখ দিয়ে। ভারতীয় ফুটবল শুরু সময় থেকে মোহনবাগান, মহমেডান স্পোর্টিং এবং ইস্টবেঙ্গল লিগ্যাসি বহন করছে। তাই ভারতীয় ফুটবলের স্বার্থেই এই দলগুলিকে দরকার। আমি আগেই বলেছিলাম, ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেলবে। আজ সেটাই ঘটতে যাচ্ছে।’ এক সময়ের শিল্পী ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘আমি খুবই চাইছিলাম ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেলুক। মোহনবাগান আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। এবার ইস্টবেঙ্গলেরও আইএসএল খেলা নিশ্চিত হওয়ার পথে। এর চেয়ে বড় কথা আর কী আছে? তা ছাড়া ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের ডার্বি ম্যাচ না হলে ভারতে যে কোনও ফুটবল প্রতিযোগিতাই অর্থহীন হয়ে যায়।’